প্রতিনিধি,দুর্গাপুর:- বিজেপি করার অপরাধে ভ্যাকসিনের লাইন থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ। অভিযোগ অপমানে জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা গৃহবধূর।দুর্গাপুরের এই ঘটনায় এখন ঐ গৃহবধূ আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।অভিযুক্ত কাউন্সিলারকে গ্রেপ্তার করা না হলে দুর্গাপুর অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব।
দুর্গাপুর নগর নিগমের ৪২নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে সুকুমার নগর এলাকা।স্থানীয় সুকুমার নগর প্রাথমিক স্কুলে গত বৃহস্পতিবার ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ চলছিল।আর পাঁচ জনের মতো লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বছর তিরিশের ঝর্ণা দাস।কিন্তু বেলা গড়ালেও ভ্যাকসিন না মেলায় ঝর্ণা দাস,প্রশ্ন তোলেন সবাই যখন ভ্যাকসিন পাচ্ছে কেন তিনি পাবেন না। অভিযোগ এরপরই ভ্যাকসিনের লাইন থেকে সবার সামনে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় ঝর্ণা দেবীকে।অভিযোগ স্থানীয় ৪২নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রিয়াঙ্কি পাঁজা তাকে লাইন থেকে বের করে দেন।
এরপর শুক্রবার বিকেলের দিকে কাউকে কিছু না বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় ঝর্ণা দাস,ঘরে অনেকক্ষণ না ফেরায় তার স্বামী সুজিত দাসের সন্দেহ হওয়ায় ঘরের সামনেই দুর্গাপুর ব্যারেজে ছুটে যান তিনি, তখন বাঁকুড়ার বড়জোড়া থানার পুলিশ সুজিত বাবুকে জানায় ঝর্ণা দাস দামোদরের জলে ঝাঁপ দিয়েছিল,কোনোক্রমে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল পড়ে বিধাননগরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করে।
এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন ঝর্ণা দাস।দুর্গাপুরের এই গৃহবধূর স্বামী সুজিত দাসের অভিযোগ,স্রেফ বিজেপি করার অপরাধে তার স্ত্রীকে ভ্যাকসিনের লাইন থেকে বের করে দেওয়া হয়,আর সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে দামোদরের জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে তার স্ত্রী,আর খোদ তৃণমূল কাউন্সিলার প্রিয়াঙ্কি পাঁজার নেতৃত্বে এই ঘটনা হয়েছে বলে সুজিত দাসের অভিযোগ।
একটি সুইসাইট নোট মিলেছে ঝর্ণা দাসের কাছ থেকে।কোকওভেন থানায় স্থানীয় কাউন্সিলার প্রিয়াঙ্কি পাঁজার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে,অভিযোগ দায়ের হয়েছে আরো বেশ কয়েকজন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীর নামে।
সামান্য মুদির দোকান চালিয়ে সংসার চালান সুজিত বাবু,এবার নির্বাচনে সুজিত দাস ও তার স্ত্রী ঝর্ণা দাস বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচারও করেছিল,এখন স্ত্রীর ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ কিভাবে টানবেন তা নিয়ে বেশ চিন্তিত সুজিত বাবু,মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর রিলিফ ফান্ড থেকে অসহায় এই পরিবার আর্থিক সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন।
যদিও যাবতীয় অভিযোগ, অস্বীকার করেছেন নগর নিগমের ৪২নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রিয়াঙ্কি পাঁজা।তিনি বলেন তার ওয়ার্ড এ তিনদিনে মোট ৮৬৬ জন কে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, তিনি কোনো রাজনৈতিক রং না দেখে সবাইকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।এবং সে দিন শান্তিপ্রিয় ভাবে সমস্থ পক্রিয়া টি সম্পন্ন হয়েছে।তিনি আরো জানান শেষে দুটি ভ্যাকসিন দু জন বয়স্ক মানুষ কে দেওয়া হয় এবং ঝর্ণা দাস তার কাছে এসে ভ্যাকসিনের ব্যাপারে বললে তখন তাকে তিনি বলেন আবার ভ্যাকসিন আসবে তখন তিনি তার ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করে দেবেন। তিনি আরো বলেন উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে তাকে এবং তার দল তৃণমূল কে বদনাম করার জন্য এটা করেছে ঝর্ণা দেবী। প্রিয়াঙ্কা পাঁজার অভিযোগ এর আগেও ঝর্ণাদেবী তাকে বদনাম করার চেষ্টা করেছেন। উনি যদি এরকম ভাবে তাকে বদনাম করার জেস্টে করেন তা হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
অন্যদিকে দুর্গাপুর নগর নিগমের কাউন্সিলার তথা বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন স্রেফ বিজেপি করার অপরাধে ভ্যাকসিনের লাইন থেকে এক বিজেপি কর্মী ও তার পরিবারকে অপমান করে বের করে দেওয়া হলো,আর যে অপমান সহ্য করতে না পেরে অপমানে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করল ওই বিজেপি কর্মীর স্ত্রী। তিনি আরো বলেন এই ঘটনা বাংলার লজ্জা ,অবিলম্বে অভিযুক্ত কাউন্সিলার প্রিয়াঙ্কি পাঁজাকে গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়েছে এই বিজেপি নেতা।
দুর্গাপুর নগর নিগমের স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ রাখী তেওয়ারী জানিয়েছেন,ভ্যাকসিন সবার জন্য কিন্তু কেন এই অভিযোগ উঠল সেটা খোঁজ খবর নিয়ে দেখা হবে।গোটা ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দুর্গাপুরে।
আরো পড়ুন :- বুদবুদে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের সংবর্ধনা সভার আয়োজন হলো শনিবার
অভিযুক্ত কাউন্সিলার প্রিয়াঙ্কি পাঁজা ও বাকি অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার করা না হলে লাগাতার আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই।তিনি আরো বলেন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরও যদি ৪৮ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলার প্রিয়াঙ্কি পাঁজাকে পুলিশ গ্রেপ্তার না করে তাহলে দুর্গাপুর অচল করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই।গোটা ঘটনায় বেশ বিড়ম্বনায় তৃণমূল শিবির।